মানুষের জীবনে শান্তি নেই কেন
মানুষের জীবনে শান্তি নেই বলার মূল কারণ হলো অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় কারণে আসা অশান্তি। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ অশান্তি একাধিক মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার ফলে আসে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অপূর্ণ ইচ্ছা, এবং নেতিবাচক চিন্তা মানুষের মনের শান্তি নষ্ট করে। যখন মানুষের মনের মধ্যে অস্থিরতা বা অসন্তোষ থাকে, তখন তারা বাইরের পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণভাবে দেখতে পারে না। অনেক সময় ব্যক্তি তার জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, যার ফলে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয় এবং শান্তির অনুভূতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।অন্যদিকে, বাহ্যিক অশান্তি মানুষের শান্তি নষ্ট করার প্রধান কারণ। সমাজের চাপ, পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্কের জটিলতা, এবং আর্থিক সমস্যা অনেক সময় মানুষের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে সফল হতে গিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ এবং চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে তার মনের শান্তি চলে যায়। এছাড়া, সমাজে কেবল বাহ্যিক অর্জনের উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং আত্মতৃপ্তির অভাবও মানুষের শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
পৃথিবীতে শান্তি পেতে হলে, মানুষের উচিত আত্মসচেতনতা অর্জন করা এবং তার মানসিক সুস্থতার দিকে নজর দেওয়া। আত্মতৃপ্তি এবং নিজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, প্রকৃত শান্তি কখনও বাহ্যিকভাবে অর্জিত হয় না, বরং এটি একটি অভ্যন্তরীণ অনুভূতি।
সুখ কোথায়, সুখের ব্যাখা কী
সুখ একটি স্বতন্ত্র অভ্যন্তরীণ অনুভূতি, যা ব্যক্তির মনের উপর নির্ভর করে। এটি বাহ্যিক ঘটনার উপর অনেক কম প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ, সুখ কখনোই কোনো বস্তু, টাকা, বা বাহ্যিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল নয়। সুখের আসল উৎস হলো আমাদের মনের ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর, ভালো চাকরি পাওয়ার পর বা আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হলে অনেকেই মনে করেন, তারা সুখী হবেন। কিন্তু বাস্তবে, এ ধরনের বাহ্যিক অর্জন সাধারণত সাময়িক সুখ দেয় এবং কিছুদিন পর আবার একটি শূন্যতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। প্রকৃত সুখ তখনই আসে যখন ব্যক্তি নিজেকে স্বীকার করে এবং মনের মধ্যে শান্তি ও সন্তুষ্টি খুঁজে পায়।
মানসিক শান্তি এবং আত্মবিশ্বাস সুখের মূল উপাদান। যখন একজন মানুষ তার জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে, যখন সে নিজের মূল্য উপলব্ধি করতে পারে, তখন সে প্রকৃত সুখের অনুভূতি পায়। এছাড়া, ছোট ছোট মুহূর্তগুলো যেমন, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সময় কাটানো, প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন, অথবা নিজের শখ বা আগ্রহের প্রতি মনোনিবেশ করা, এসবও সুখের অংশ হতে পারে।
মানুষ সহজে কিছু পেলে তার মূল্য দিতে চায় না কেন
মানুষ সাধারণত যখন কিছু সহজেই পায়, তখন তা বেশি গুরুত্ব দেয় না বা তার মূল্য বুঝতে পারে না। এর পেছনে মনস্তাত্ত্বিক কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, সহজে পাওয়া কোনো বস্তু বা অর্জন মানুষকে ততটা পরিশ্রম করতে বাধ্য করে না। পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে অর্জনটির প্রতি মূল্যায়ন এবং সম্মান বেড়ে যায়।
এছাড়া, যখন কিছু সহজেই পাওয়া যায়, তখন মানুষের মধ্যে কিছুটা শিথিলতা চলে আসে। তারা ধরে নেয়, এটি আবারও পাওয়া যাবে এবং তাদের মধ্যে আগ্রহ কমে যায়। এতে করে তারা সেটি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে সবকিছু সহজেই পাওয়া যায় টাকা, সাফল্য বা সামাজিক মর্যাদা তখন সে মনে করে যে, এসব সব সময়ই থাকবে, ফলে সে এগুলোর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে পারে না।
মানুষ সাধারণত তখনই মূল্যবান কিছু অনুভব করে, যখন তা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয় বা সেটা হারানোর সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে, জীবনে পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করা কিছুর প্রতি সম্মান এবং মূল্য বেশি থাকে।
উপসংহার:
মানুষের জীবনে শান্তি, সুখ, এবং মূল্যবোধের অনুপস্থিতি নানা কারণে হয়ে থাকে। আত্মবিশ্বাসের অভাব, বাহ্যিক চাপ, এবং নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভ্রান্তি শান্তি এবং সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে, সত্যিকারের শান্তি এবং সুখের জন্য আমাদের মনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং বাহ্যিক সমগ্রতার দিকে নয়, অভ্যন্তরীণ তৃপ্তির দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। যেগুলো সহজে পাওয়া যায়, সেগুলোর প্রতি মূল্য দেওয়া কঠিন, কিন্তু পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত বস্তু বা অনুভূতিকে আমরা অনেক বেশি মূল্যায়ন করি। জীবনের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ তার শান্তি ও সুখ ফিরে পেতে পারে।